নতুন সরকারের মন্ত্রিসভা সম্প্রসারণের প্রস্তুতি শুরু হয়েছে এমন আলোচনা-গুঞ্জন চলছে রাজনৈতিক মহলসহ সর্বত্র। এ নিয়ে কথা বলেছেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক, সড়ক পরিবহণ ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরও। এরইমধ্যে মঙ্গলবার সংসদে সংরক্ষিত আসনের ৫০ জন নতুন সংসদ সদস্যের নাম গেজেট বিজ্ঞপ্তি আকারে প্রকাশ করা হয়েছে। আজ বুধবার তারা সংসদ সদস্য হিসেবে শপথগ্রহণ করবেন বলে ধারণা করা হচ্ছে। এর পরপরই মন্ত্রিসভার সম্প্রসারণ প্রক্রিয়া শুরু হবে বলে একাধিক সূত্র নিশ্চিত করেছে।
সূত্রমতে, কাল বৃহস্পতিবার অথবা ৩ মার্চ রোববার মন্ত্রিসভার সম্প্রসারণ হতে পারে। আর এই মন্ত্রিসভার সম্প্রসারণে নতুন ১০ থেকে ১২ জন মন্ত্রী মন্ত্রিসভায় জায়গা পেতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে। সম্প্রসারিত মন্ত্রিসভায় অন্তত তিনজন নারী সংসদ সদস্য জায়গা পেতে পারেন বলে ধারণা করা হচ্ছে। চট্টগ্রাম থেকে নির্বাচিত একজন সংরক্ষিত আসনে সংসদ সদস্যকেও মন্ত্রিসভায় অন্তর্ভুক্ত করা হতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে। তবে সম্প্রসারিত মন্ত্রিসভায় দুইজন অন্তত টেকনোক্র্যাট কোটায় মন্ত্রী হতে পারেন। রাজনীতিবিদ কারা কারা মন্ত্রিসভায় স্থান পান বা আদৌ স্থান পান কিনা সেটি নিয়ে আওয়ামী লীগের মধ্যে আলাপ আলোচনা এবং জল্পনাকল্পনা সবচেয়ে বেশি। আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা কর্মীবান্ধব জনপ্রিয় নেতাদের মন্ত্রিসভায় অন্তর্ভুক্তি চান। এটি তাদের প্রত্যাশার কথা। এ নিয়ে আওয়ামী লীগের বিভিন্ন মহলে আলোচনা হচ্ছে। আওয়ামী লীগের যে সমস্ত জনপ্রিয় রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ মন্ত্রিসভায় অন্তর্ভুক্ত থাকতে পারেন বলে বিভিন্ন মহল মনে করছেন, তাদের মধ্যে রয়েছেন-দলের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও ঢাকা-৮ আসনের সংসদ সদস্য আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম, সাংগঠনিক সম্পাদক মির্জা আজম ও এস এম কামাল হোসেন। এছাড়াও গত মন্ত্রিসভায় স্থান পাওয়া এবং নতুন মন্ত্রিসভায় বাদ করা এনামুল হক শামীম মন্ত্রিসভায় অন্তর্ভুক্ত হতে পারেন এমন গুঞ্জনও রয়েছে।
দায়িত্বশীল একাধিক সূত্র জানায়, নারী নেত্রীদের সুযোগ করে দিতে মন্ত্রিসভা সম্প্রসারণের বিষয়টি নিয়ে এতদিন কালক্ষেপণ করা হয়েছে। সংরক্ষিত নারী আসনে নির্বাচিতদের শপথগ্রহণের পর সেটা ত্বরান্বিত হবে। সংরক্ষিত নারী আসনের এমপিদের মধ্যে কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য ও সাবেক প্রতিমন্ত্রী এডভোকেট তারানা হালিম, সাবেক শ্রম ও কর্মসংস্থান প্রতিমন্ত্রী মন্নুজান সুফিয়ান, আওয়ামী লীগের অর্থ ও পরিকল্পনা সম্পাদক ওয়াসিকা আয়শা খানকে নিয়ে জোর আলোচনা রয়েছে। পাশাপাশি আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ও সাবেক নৌপরিবহণ মন্ত্রী শাজাহান খান, আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম, মির্জা আজম দায়িত্ব পাচ্ছেন এমন আলোচনাও রয়েছে দলের মধ্যে। নতুন সংসদ সদস্য হয়েছেন এমন কাউকে কাউকেও নিয়ে আসা হতে পারে মন্ত্রিসভায় এমন গুঞ্জনও রয়েছে। এর বাইরে আলোচনায় আছেন প্রধানমন্ত্রীর সাবেক মুখ্য সচিব আহমদ কায়কাউস। তিনি বিশ্বব্যাংকের বিকল্প নির্বাহী পরিচালক হিসেবে তিন বছরের চুক্তিতে ছিলেন। গত ৮ ফেব্রুয়ারি চুক্তি বাতিল করে তাকে ঢাকায় ফিরিয়ে আনার পর থেকে অনেকেই মনে করছেন মন্ত্রিসভার সদস্য হিসেবে তাকে দায়িত্ব দেয়া হতে পারে টেকনোক্র্যাট কোটায়।
মন্ত্রিসভায় বর্তমানে ছয়টি মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বে আছেন প্রধানমন্ত্রী। এর মধ্যে সংস্কৃতি মন্ত্রণালয় এবং শ্রম মন্ত্রণালয়ে নতুন মন্ত্রী নিয়োগ হবে এটা মোটামুটি নিশ্চিত। এছাড়াও বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে একজন পূর্ণাঙ্গ মন্ত্রী নিয়োগের স¤া¢বনা রয়েছে বলেও সূত্রে জানা গেছে। পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়েও টেকনোক্র্যাট কোটায় একজন প্রতিমন্ত্রী নিয়োগ দেয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। এছাড়াও আরও কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রণালয়ে? প্রতিমন্ত্রী নিয়োগ পেতে পারেন। তবে মন্ত্রিসভার সম্প্রসারণের কাজটি প্রধানমন্ত্রী একাই করছেন এবং এ ব্যাপারে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষমতা সংবিধান তাকেই দিয়েছে। তাই সব কিছু নির্ভর করছে প্রধানমন্ত্রীর অভিপ্রায়ের ওপর।
এদিকে মন্ত্রিসভার সম্প্রসারণের খবরে বঞ্চিত বিভিন্ন অঞ্চল থেকে নতুন মন্ত্রী দেয়ারও জোর দাবি উঠেছে। বিশেষ করে ৩৭ সদস্যবিশিষ্ট মন্ত্রিসভায় কম সদস্য থাকা ছয়টি বিভাগ থেকে বেশি দাবি আসছে। চলমান মন্ত্রিসভায় ঢাকা ও চট্টগ্রাম বিভাগের প্রাধান্য বেশি থাকলেও সম্প্রসারণের ক্ষেত্রে অবহেলিত বিভাগগুলোকে প্রাধান্য দেবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এমনটাও মনে করছেন অনেকে।
এ বিষয়ে জাতীয় সংসদের হুইপ আবু সাইদ আল মাহমুদ স্বপন বলেন, নির্বাচন কমিশন ঘোষিত তফসিল মোতাবেক সংরক্ষিত নারী আসনের প্রার্থীদের বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত ঘোষণা করে গেজেট প্রকাশিত হয়েছে। তারপর শপথ হবে। আগামী ২৮ কিংবা ৩ মার্চ শপথ অনুষ্ঠিত হতে পারে।
এ বিষয়ে আওয়ামী লীগের একজন কেন্দ্রীয় নেতা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, দলের সাধারণ সম্পাদকসহ গুরুত্বপূর্ণ কয়েকজনের সঙ্গে আলোচনার পর যেটুকু বুঝতে পেরেছি, তাতে সংরক্ষিত নারী আসনের শপথের পরপরই মন্ত্রিসভার সম্প্রসারণ হতে পারে। এক্ষেত্রে খুব বেশি কালক্ষেপণ করা হবে না।
বঞ্চিত অঞ্চলগুলো থেকে নতুন মন্ত্রীর জোর দাবি : প্রধানমন্ত্রীসহ ৩৭ সদস্যের নতুন মন্ত্রিসভার ঢাকা বিভাগ থেকে ১৫ জনকে রাখা হয়েছে। এরপরই রয়েছে চট্টগ্রাম বিভাগ। এই বিভাগ থেকে দেয়া হয়েছে ৯ জনকে। ৩ জন সদস্য নিয়ে পরের স্থানে রয়েছে সিলেট বিভাগ। বাকি বরিশাল, খুলনা, ময়মনসিংহ, রাজশাহী ও রংপুর বিভাগের দুজন করে মন্ত্রিসভায় স্থান পেয়েছেন। বরাবর সুনজরে থাকা সিলেট এবার অবহেলিতদের তালিকায়। এবার সিলেট বিভাগ থেকে দুজনকে মন্ত্রী ও একজনকে প্রতিমন্ত্রী করা হয়েছে। এর মধ্যে একজন ডা. সামন্তলাল সেন টেকনোক্র্যাট হিসেবে মন্ত্রিসভায় স্থান পেয়েছেন। মৌলভীবাজার-৪ থেকে নির্বাচিত উপাধ্যক্ষ মো. আব্দুস শহীদ মন্ত্রী হয়েছেন। আর সিলেট-২ থেকে নির্বাচিত শফিকুর রহমান চৌধুরী পেয়েছেন প্রতিমন্ত্রীর দায়িত্ব। গত মন্ত্রিসভায় এই বিভাগ থেকে পাঁচজন সদস্য ছিলেন। গত সরকারের সময় রংপুর ও রাজশাহী বিভাগ থেকে চার মন্ত্রী ও তিন প্রতিমন্ত্রী ছিলেন, সেই সংখ্যা এবার চারে এসে ঠেকেছে। গতবার পঞ্চগড় থেকে নূরুল ইসলাম সুজন রেলমন্ত্রী এবং রংপুর থেকে টিপু মুনশি বাণিজ্যমন্ত্রী হলেও এবার এই দুজনই বাদ পড়েছেন। এছাড়া রাজশাহীর আট জেলার মধ্যে নাটোর ও নওগাঁ থেকে পুরোনো দুই সদস্য স্থান পেলেও বাকি জেলাগুলো বঞ্চিতই রয়ে গেছে। অন্যদিকে বৃহত্তর রংপুর থেকে একজন মন্ত্রী ও একজন প্রতিমন্ত্রী হয়েছেন। খুলনা বিভাগে গত দুই মেয়াদে চারজন করে মন্ত্রিসভায় থাকলেও এবার রয়েছেন মাত্র দুজন। এছাড়া বরিশাল বিভাগে একজন পূর্ণ মন্ত্রী না পাওয়ায় হতাশা প্রকাশ করেছেন নেতাকর্মী ও সাধারণ মানুষ। প্রতিমন্ত্রী হিসেবে এবার দক্ষিণাঞ্চলের প্রতিনিধিত্ব করছেন বরিশাল-৫ আসনের জাহিদ ফারুক ও পটুয়াখালী-৪ আসনের মুহিববুর রহমান। একইভাবে গত দুই মেয়াদের চেয়ে কম মন্ত্রী পেয়েছে ময়মনসিংহ বিভাগও। এবার দুজনকে মন্ত্রী করা হয়েছে এই বিভাগ থেকে। ময়মনসিংহ-৯ থেকে নবনির্বাচিত এমপি মেজর জেনারেল (অব.) আবদুস সালাম ও ধর্ম প্রতিমন্ত্রী ফরিদুল হক খানকে পদোন্নতি দিয়ে পূর্ণ মন্ত্রী করা হয়েছে।
উল্লেখ্য, গত ৭ জানুয়ারি দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিজয়ের পর টানা চতুর্থ মেয়াদে সরকার গঠন করে আওয়ামী লীগ। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে ৩৭ সদস্যবিশিষ্ট মন্ত্রিসভার শপথগ্রহণ অনুষ্ঠিত হয় গত ১১ জানুয়ারি। নতুন মন্ত্রিসভায় ২৫ জন মন্ত্রী ও ১১ জন প্রতিমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পান। মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রীদের মধ্যে দায়িত্ব বণ্টন করা হলেও শ্রম ও কর্মসংস্থান এবং সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ে কোনো মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রী না দিয়ে প্রধানমন্ত্রীর অধীনে রাখা হয়। এছাড়া শিক্ষা, স্বাস্থ্য ও অর্থ মন্ত্রণালয়ের মতো বড় ও গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রণালয়ে শুধু মন্ত্রী দেয়া হয়েছে। অনেকেই মনে করছেন, সম্প্রসারণ হলে ফাঁকা থাকা মন্ত্রণালয়ের পাশাপাশি এই মন্ত্রণালয়গুলোতেও নতুন মুখ দেখা যেতে পারে। ২০১৮ সালের নির্বাচনের পর গঠিত সরকারের মন্ত্রিসভায় ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগে মন্ত্রী থাকলেও নতুন মন্ত্রিসভায় সেটা এখনও ফাঁকা রাখা হয়েছে। এজন্য অনেকেই মনে করছেন, এখানেও নতুন কাউকে দায়িত্ব দেয়া হতে পারে। তবে আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা অনেক হিসাব-নিকাশ করেই মন্ত্রিসভার সদস্যদের চূড়ান্ত করে থাকেন। এক্ষেত্রে দলের জ্যেষ্ঠ নেতাদের পাশাপাশি নিজস্ব কিছু মানুষের সঙ্গে আলাপ-আলোচনা করেও মতামত নিয়ে থাকেন তিনি। এবারও এমনটাই করেছেন। ৩৭ সদস্যবিশিষ্ট নতুন মন্ত্রিসভা গঠন ও দুটি মন্ত্রণালয় ফাঁকা রাখার পর অনেকের মধ্যেই ধারণা তৈরি হয় মন্ত্রিসভার আকার বৃদ্ধি ও সম্প্রসারণ নিয়ে এবার বেশি কালক্ষেপণ করবেন না প্রধানমন্ত্রী।
এ বিষয়ে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক, সড়ক পরিবহণ ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেছেন, মন্ত্রিসভা গঠন, সম্প্রসারণ বা রদবদল পুরোপুরিভাবে প্রধানমন্ত্রীর একক এখতিয়ার। কে কে মন্ত্রিসভায় আসবেন-এটি একান্তভাবেই প্রধানমন্ত্রী জানেন। সরকারের প্রয়োজনে মন্ত্রিসভার আকার বাড়তেও পারে, আবার নাও বাড়তে পারে।
নিউজটি আপডেট করেছেন : Dainik Janata

নতুন ১০ থেকে ১২ জন মন্ত্রী সভায় জায়গা পেতে পারেন
সম্প্রসারণ হচ্ছে মন্ত্রিসভা
- আপলোড সময় : ২৮-০২-২০২৪ ০৭:১৯:১০ অপরাহ্ন
- আপডেট সময় : ২৮-০২-২০২৪ ০৭:১৯:১০ অপরাহ্ন


কমেন্ট বক্স
সর্বশেষ সংবাদ